রোযা সংক্রান্ত মহিলাদের গুরুত্বপূর্ণ মাসায়েল

মাসয়ালা : রমজান মাসে মহিলাদের পিরিয়ডের রোজা না রাখলে অথবা রোজা রাখার পর পিরিয়ড শুরু হলে তার জন্য পানাহার করা বৈধ। তবে অন্য লোকদের সামনে পানাহার করা উচিত নয়। দিনের বেলায় যদি ঋতু বন্ধ হয়ে স্বাভাবিক হয়ে ওঠে, তাহলে দিনের বাকি অংশে রোজাদারের মতো পানাহার ও যৌনাচার বর্জন করা ওয়াজিব। -আহসানুল ফাতাওয়া : ৪/৪২০

এ প্রসঙ্গে হাদিসে আছে, উম্মুল মুমিনীন হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত যে, তাকে জিজ্ঞেস করা হলো হায়েজ থেকে পবিত্রতার পর মহিলারা কি নামাজ ও রোজার কাজা আদায় করবে? তিনি বললেন, এ অবস্থায় আমাদের রোজার কাজা আদায় করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে নামাজের নয়।’ -সহিহ বোখারি ও মুসলিম

রোজা কাজা করা আর নামাজ কাজা না করা সম্পর্কে উম্মুল মুমিনিন হজরত আয়েশা (রা.) যা বলেছেন সমস্ত উলামায়ে কেরাম তার সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন অর্থাৎ ইজমা বা ঐক্যমত প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

মাসয়ালা : হায়েজ (মাসিক পিরিয়ড), নেফাসের (প্রসব পরবর্তী স্রাব) সময়গুলোতে রোজা রাখা নিষেধ, তবে পরবর্তীতে এ দিনগুলোর রোজার কাজা করতে হবে।

মাসয়ালা : পবিত্র অবস্থায় রোজা রাখার পর যদি হায়েজ শুরু হয় বা সন্তান প্রসব হয়, তাহলে রোজা ভেঙ্গে যাবে এবং পরে তা কাজা করতে হবে। চাই সেটা ফরজ বা নফল রোজা হোক।

মাসয়ালা : রমজান মাসে সুবহে সাদেকের পর যদি কোনো মহিলার হায়েজ, নেফাস বন্ধ হয়ে যায় এবং সে এই সময়ের মধ্যে কোনো কিছু পানাহার না করে এমতাবস্থয় যদি সে রোজার নিয়ত করে তাহলে ওই দিনের রোজা শুদ্ধ হবে না বরং পরবর্তীতে উক্ত রোজার কাজা করতে হবে, কারণ সে দিনের শুরুলগ্নে অপবিত্র ছিল।

মাসয়ালা : যদি কেউ পূর্ণ ১০ দিন ১০ রাত পর, রাতের শেষভাগে গিয়ে পবিত্র হয় এবং তখন রাতের এতটুকু সময়ও হাতে নেই যার মধ্যে একবার আল্লাহু আকবার বলতে পারে। তবুও পরের দিনের রোজা ওয়াজিব। আর যদি ১০ দিনের কমে হায়েজ বন্ধ হয় এবং এতটুকু রাত অবশিষ্ট থাকে, যার মধ্যে তাড়াহুড়া করে গোসল করে নিতে পারে তবে ১ বারও আল্লাহু আকবার বলা যায় না। তবুও পরের দিনের রোজা ওয়াজিব হবে। এমতাবস্থায় গোসল না করে থাকলে গোসল ছাড়াই রোজার নিয়ত করে নিবে, আর যদি সময় তার চেয়েও কম থাকে তাহলে রোজা হবে না, তাই সে রোজা রাখবে না। তবে সারাদিন তাকে রোজাদারের মতোই থাকতে হবে এবং পরে কাজা করতে হবে।

মাসয়ালা : হায়েজ, নেফাস অবস্থায় কোরআন শরিফ তেলাওয়াত করা মুখস্থ হোক বা দেখে হোক জায়েজ নয়।

মাসয়ালা : কোনো মেয়ের হেফজ করা অবস্থায় হায়েজ এসে গেলে এবং মুখস্থ করার জন্য তেলাওয়াতের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিলে বা কোনো হাফেজা মেয়ের হায়েজ অবস্থায় কোরআন হেফজ করার জন্য তেলাওয়াত জারি রাখতে চাইলে মনে মনে তেলাওয়াত করবে মুখে উচ্চারণ করবে না।

মাসয়ালা : হায়েজ, নেফাসওয়ালি মহিলা বাচ্চাদেরকে কোরআন শরিফ বানান করে শিক্ষা দিতে পারবে। তবে রিডিং পড়ানোর সময় ১ শ্বাসে পূর্ণ ১ আয়াত পড়াতে পারবে না বরং শ্বাস ভেঙ্গে ভেঙ্গে ১-২ শব্দ করে পড়াতে হবে।

মাসয়ালা : কোনো মহিলা হায়েজ, নেফাস অবস্থায় আয়াতে সিজদার তেলাওয়াত শুনলে তার ওপর সিজদা করা ওয়াজিব নয়।

মাসয়ালা : হায়েজ, নেফাস অবস্থায় কোরআন শরিফ স্পর্শ করা যেমন জায়েজ নয় অনুরূপভাবে কোরআনের আয়াত কোথাও লেখা থাকলে তাও স্পর্শ করা জায়েজ নয়। তবে যদি এমন কোনো কিতাব হয় যার মধ্যে কোরআনের আয়াত অপেক্ষা অন্য কোনো লেখা বেশি থাকে তাতে হাত লাগানো যাবে, তবে আয়াতের ওপর হাত লাগানো যাবে না।

মাসয়ালা : বর্তন, পিরিচ অথবা কাগজের ওপর যদি শুধু কোরআনের আয়াত লেখা থাকে, তাতে হাত লাগানো যাবে না, তবে পৃথক কোনো কাপড় দিয়ে তা ধরা যাবে।

মাসয়ালা : কোরআন শরিফের গিলাফ যদি কোরআন শরিফ থেকে আলাদা হয়, তবে তা দ্বারা কোরআন শরিফ ধরা জায়েজ আছে। অনুরূপভাবে শরীরে থেকে বিচ্ছিন্ন কাপড় দ্বারাও কোরআন শরিফ ধরা জায়েজ আছে।

মাসয়ালা : কোরআন শরিফের সঙ্গে সংযুক্ত গিলাফ এবং যে কাপড় শরীরের সঙ্গে যুক্ত আছে যেমন উড়না, জামার আস্তিন ইত্যাদি দ্বারা কোরআন শরিফ স্পর্শ করা বা ধরা জায়েজ নয়।

মাসয়ালা : হায়েজ, নেফাস অবস্থায় ধর্মীয় কিতাব পড়া এবং সেগুলো স্পর্শ করা জায়েজ আছে। তবে যে সব স্থানে কোরআনের আয়াত লেখা আছে তা পাঠ করা যাবে না এবং সেখানে যেন হাতের স্পর্শ না লাগে সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে।

মাসয়ালা : হায়েজ, নেফাস অবস্থায় কোরআন তেলাওয়াত ছাড়া যাবতীয় জিকির-আজকার, দোয়া-দুরুদ ও তাসবিহ-তাহলিল পাঠ করা জায়েজ আছে। এমনকি দোয়ার নিয়তে কোরআনের আয়াতও পাঠ করা জায়েজ আছে।

মাসয়ালা : পানাহারের শুরুতে বিসমিল্লহির রাহমানির রাহিম ও শেষে আলহামদুলিল্লাহ বলতে কোনো অসুবিধা নেই।

মাসয়ালা : গর্ভবর্তী বা স্তন্যদানকারিনী রোজাদার মহিলার যদি রোজা রাখার কারণে বাচ্চার বা তার প্রাণহানি মা মারাত্মক স্বাস্থ্যহানির প্রবল আশঙ্কা হয়, তবে রোজা ভেঙ্গে ফেলা জায়েজ; অন্যথায় জায়েজ হবে না।

মাসয়ালা : ইস্তিহাযা (অসুস্থতাজনিত কারণে দেখা দেয়া স্রাব, নিয়মিত পিরিয়ডকালীন সময়ের বেশি সময়ে যা দেখা দেয়) অবস্থায় রোজা রাখা সহিহ এবং জরুরি। রোজা না রাখার অনুমতি নেই।

মাসয়ালা : ইস্তিহাযা অবস্থায় মহিলারা নিজ ঘরে ওয়াজিব, সুন্নত ও নফল ইতিকাফ করতে পারবে তাতে কোনো অসুবিধা নেই ।

মাসয়ালা : ইস্তিহাযা অবস্থায় মহিলারা কোরআন শরিফ তেলাওয়াত ও স্পর্শ করতে পারবে।

মাসয়ালা : প্রাপ্ত বয়স্ক নারীদের প্রতিমাসে মাসিক হওয়া আল্লাহ প্রদত্ত একটি প্রাকৃতিক নিয়ম। নিয়মিত মাসিক হওয়া স্বাস্থ্যের জন্যেও উপকারী। এ জন্য ইসলা‍মি শরিয়ত তাদের এ দিবসগুলোতে রোজা না রাখার বিধান রেখেছে। এতদসত্ত্বেও যদি কোনো নারী ঔষধ সেবনের মাধ্যমে মাসিক বন্ধ রাখে তাহলে শরিয়তের পক্ষ থেকে কোনো প্রকার বাধা-নিষেধ নেই। তবে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হওয়ায় এরূপ না করায় উত্তম। তা সত্ত্বেও যদি কেউ এমন ব্যবস্থা নেয়, তাহলে তার রোজা হয়ে যাবে। -আল বাহরুর রায়েক: ২/৪৪৯, ফতোয়ায়ে হক্কানি: ৪/১৫৮

মাসয়ালা : বাচ্চা জন্ম দেওয়ার পর প্রসূতি অথবা রুগ্ন দুর্বল মহিলা, যে রোজা রাখতে পারে না, এমতাবস্থায় তার পক্ষে ফিদইয়া দেয়া যথেষ্ট নয়। যদি ফিদইয়া দিয়ে দেয় এবং পরে সুস্থ হয় এবং রোজা রাখার সক্ষমতা এসে যায়, তাহলে ওই রোজার কাজা করা জরুরি। -ফাতাওয়া দারুল উলুম: ৬/৪৭৮

মাসয়ালা : দুধ পান করানোর দ্বারা মহিলাদের রোজা ও অজু ভাঙ্গে না। রোজা এ জন্য ভাঙ্গে না, দুধ বের হওয়াই স্বাভাবিক। রোজা তো পানাহার ও যৌনাচার থেকে বিরত থাকার নাম। -ফাতাওয়া দারুল উলুম: ৫/৪০৮

#ঋতুস্রাব নারীর বিধান:

ঋতুস্রাব চলাকালীন নারীদের নামায পড়া, রোযা রাখা নিষিদ্ধ।

পার্থক্য হল, নামায একেবারে মাফ হয়ে যায়,পবিত্র হওয়ার পরও কাযা করতে হবে না। কিন্তু রোযা একেবারে মাফ হয়ে যায় না, বরং পবিত্র হওয়ার পর কাযা করতে হবে।

সূত্রঃ(বাহরুর রায়িকঃ ২/১৯৪, বেহেশতি যেওরঃ২/৫৯)

#নিফাসের হুকুম:

সন্তান প্রসবকালীন থেকে নিয়ে সর্বোচ্চ চল্লিশ দিন পর্যন্ত নারীর জরায়ু থেকে যে রক্ত বের হয়,তাকে নিফাস বলে।

নিফাসের সময়ও নামায পড়া ও রোযা রাখা নিষিদ্ধ।

ঋতুস্রাবের ন্যায় নামায মাফ কিন্তু রোযার

কাযা করতে হবে।

সূত্রঃ(বাহরুর রায়িকঃ ২/১৯৪, বেহেশতি যেওরঃ২/৫৯)

#ইস্তিহাযার হুকুম:

হায়েয নিফাস ব্যতীত নারীর জরায়ু থেকে যে রক্ত বের হয়,তাকে ইস্তিহাযা বলে।

ইস্তিহাযাকালীন নামায রোযা সব কিছুই করবে।

সূত্রঃ

(শরহে বিকায়াঃ ১/১১৩, বেহেশতি যেওরঃ২/৬১)

#রোযাবস্থায় দিনের বেলায় ঋতুস্রাব হওয়া:

ফরয নামায পড়াকালীন ঋতুস্রাব হলে ঐ নামায মাফ,পবিত্র হওয়ার পর কাযা করতে হবে না।

নফল কিংবা সুন্নাত নামায পড়াকালীন ঋতুস্রাব হলে পবিত্র হওয়ার পর তার কাযা করতে হবে।

ফরয কিংবা নফল রোযাবস্থায় ঋতুস্রাব হলে রোযা ভেঙ্গে যাবে এবং পরবর্তীতে কাযা করতে হবে।

তবে সে অবশিষ্ট দিন রোযাদারদের মত থাকবে না,বরং পানাহার করবে।

সূত্রঃ(জাওহারুতুন নাইয়ারাহঃ ১/৩২,এমদাদুল আহকামঃ ২/১৩৯,বেহেশতি যেওরঃ ২/৫৯)

#কাফফারার রোযা চলাকালীন ঋতুস্রাব হওয়া:

কাফফারার রোযা চলাকালীন যদি ঋতুস্রাব হয়,তাহলে এতে কোন অসুবিধা নেই।

এসময় রোযা বন্ধ রাখবে,পবিত্র হওয়ার সাথে সাথেই আবার শুরু করবে।

এভাবে লাগাতার ৬০টি রোযা পূর্ণ করবে।

পবিত্র হওয়ার পর একদিনও যদি বাদ দেয়,তাহলে আবার নতুন করে শুরু করতে হবে।

সূত্রঃ(আহসানুল ফাতওয়াঃ ৪/৪৪২)

#দিনের বেলায় পবিত্র হওয়া:

ঋতুস্রাব এবং নিফাস থেকে যদি রমযান মাসে দিনের বেলায় পবিত্র হয়,তাহলে অবশিষ্ট দিন পানাহার করবে না।

সূর্যাস্ত পর্যন্ত রোযাদারদের ন্যায় পানাহার ইত্যাদি থেকে বিরত থাকবে।

সূত্রঃ(শরহে বিকায়াঃ ১/৩১৬,বেহেশতি যেওরঃ২/৬১)

#রাতের বেলায় পবিত্র হওয়া:

রাতের বেলায় সুবহে সাদিকের পূর্বে ঋতুস্রাব কিংবা নিফাস থেকে পবিত্র হলে গোসল করুক বা না করুক পরবর্তী দিন রোযা রাখতে হবে।

আর সুবহে সাদিকের পর পবিত্র হলে রোযার নিয়ত করবে না,তবে সারা দিন রোযাদারদের ন্যায় পানাহার ইত্যাদি থেকে বিরত থাকবে।

সূত্রঃ(শরহে বিকায়াঃ ১/২০৭,ফাতহুল কাদীরঃ২/২৮৯)

#পবিত্র হওয়া মাত্রই কাযা করা ওয়াজিব:

ঋতুস্রাব এবং নিফাস থেকে যখনই পবিত্র হবে,

বিলম্ব না করে তখনই কাযা করবে,বিনা ওজরে বিলম্ব করা ঠিক নয়।

সূত্রঃ(কিতাবুল ফিকহ ‘আলা মাযাহিবিল আরবা‘আঃ ১/৮৮৩)

#স্বপদোষ হওয়া:

নারী-পুরুষের দিনের বেলায় নিদ্রায় যদি স্বপ্নদোষ হয়,তাহলে রোযা ভাঙ্গবে না।

সূত্রঃ(জাওহারুতুন নাইয়ারাহঃ ১/১৪২,বেহেশতি যেওরঃ ২/৬১)

#রোযাবস্থায় স্বামীর সাথে শয়ন করা:

যে নিজেকে সংযত রাখতে পারবে বলে আত্মবিশ্বাস হয়, তার জন্য রোযাবস্থায় স্বামী-স্ত্রী চুম্বন,আলিঙ্গন, স্পর্শ, মুসাফাহা-মু‘আনাকা, এক সাথে শয়ন করা জায়েয আছে।

তবে সহবাস কিংবা বীর্য বের হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকলে জায়েয নেই।

সূত্রঃ(ফাতওয়ায়ে শামীঃ ৩/৩৭৩,আলমগীরীঃ ১/২০০,ফাতওয়ায়ে দারুল উলূমঃ ৬/৪১২)

#স্বামী-স্ত্রীর ঠোঁট চোষা বা কামড়ানো:

স্বামী-স্ত্রীর ঠোঁট চোষা বা দাঁত দিয়ে কামড়ানো রোযাদারের জন্য মাকরূহ।

তবে সহবাস কিংবা বীর্য বের হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকলে জায়েয নেই।

সূত্রঃ(তাতারখানিয়াঃ ২/২৮৯,আলমগীরীঃ ১/২০০)

#কাউকে ধর্ষণ করা:

কোন পুরুষ যদি কোন নারীর সাথে জোরপূর্বক সহবাস করে,তাহলে নারী পুরুষ উভয়ের রোযা ভেঙ্গে যাবে।

তবে নারীর উপর শুধুমাত্র কাযা ওয়াজিব হবে,

কাফফারা ওয়াজিব হবে না,পুরুষের উপর কাযা ও কাফফারা উভয়টি ওয়াজিব হবে।

সূত্রঃ(ফাতওয়ায়ে শামীঃ ১/১৪৩)

#নাবালিগের সাথে সহবাস করা:

কোন প্রাপ্ত বয়স্কা নারী যদি কোন নাবালিগ ছোট বাচ্চা কিংবা পাগলের সাথে সহবাস করে,তাহলে তার রোযা ভেঙ্গে যাবে।

এর দ্বারা উক্ত নারীর উপর কাযা ও কাফফারা উভয়টি ওয়াজিব হবে।

সূত্রঃ(আলমগীরীঃ ১/২০৩)

#দুনারীর পরস্পরে আলিঙ্গন:

দু’নারী যদি পরস্পরে চুম্বন,মাখামাখি,আলিঙ্গন

ইত্যাদি করে,এর দ্বারা যদি বীর্যপাত হয়ে যায়,

তাহলে রোযা ভেঙ্গে যাবে শুধু কাযা করতে হবে,

কাফফারা দিতে হবে না।

আর যদি বীর্যপাত না হয়,তাহলে রোযা ভাঙ্গবে না।

সূত্রঃ(ফাতওয়ায়ে হিন্দিয়াঃ ২/২০)

#নারীর জরায়ুতে ঔষধ ব্যবহার:

রাতের বেলায় যদি জরায়ুতে ঔষধ ব্যবহার করে, আর উক্ত ঔষধ থাকাবস্থায় যদি রোযা শুরু হয়ে যায়, তাহলে কোন ক্ষতি নেই,রোযা হয়ে যাবে।

কিন্তু দিনের বেলায় রোযাবস্থায় জরায়ুতে ঔষধ ব্যবহার করলে রোযা ভেঙ্গে যাবে।

সূত্রঃ(ফাতওয়ায়ে রহীমিয়াঃ ২/৩৮)

#নারীর জরায়ুতে টিউব লাগানো:

রোযাবস্থায় দিনের বেলায় নারীর জরায়ুতে টিউব লাগালে রোযা ভাঙ্গবে না,নারীর লজ্জাস্থানের দু’টি অংশ রয়েছে।

এক. বাইরের অংশ।

দুই. ভিতরের অংশ।

উপরের লম্বা ছিদ্রের নীচে যে গোল ছিদ্র রয়েছে,সেখান থেকে ভিতরের অংশ শুরু।

এই ভিতরের অংশে ঔষধ প্রবেশ করলে রোযা ভেঙ্গে যাবে।

সূত্রঃ(আহসানুল ফাতওয়াঃ ৪/৪৩৮)

#কপার-টি:- কপার-টি বলা হয়,যোনিদ্বারে প্লাষ্টিক লাগানো; যেন সহবাসের সময় বীর্যপাত হলে জরায়ুতে পৌছতে না পারে,এমন করলে রোযা ভাঙ্গবে না।

তবে কাপার-টি লাগিয়ে সহবাস করলে রোযা ভেঙ্গে যাবে। কাযা ও কাফফারা উভয়টি ওয়াজিব হবে।

উল্লেখ্য যে, কপার-টি জায়েয না জায়েয তা বুঝার জন্য বিজ্ঞ উলামায়ে কিরামের শরণাপন্ন হয়ে জেনে নিতে হবে।

সূত্রঃ(দুররে মুখতারঃ ২/১০৯, আলমগীরীঃ ১/২০৪)

#নারীর জরায়ুতে ঔষধ ব্যবহার:

নারীদের জরায়ুর ভিতরের অংশে ঔষধ,পানি কিংবা তেল ব্যবহার করলে রোযা ভেঙ্গে যাবে।

কেননা, নারীদের জরায়ুর ভিতরের অংশে স্বভাবগতভাবে এমন পথ রয়েছে,যা দ্বারা পেট পর্যন্ত পৌছে যায়।

কিন্তু যদি পুরুষের প্রস্রাবের রাস্তায় ঔষধ

ব্যবহার করা হয়,তাহলে রোযা ভাঙ্গবে না।

কেননা,পুরুষের প্রস্রাবের রাস্তা থেকে পেটে পৌছার জন্য সরাসরি কোন পথ নেই, বরং মাঝখানে মূত্রথলি রয়েছে,ফাতওয়ায়ে আলমগীরীতে রয়েছে,পুরুষের প্রস্রাবের রাস্তায় যদি কোন কিছুর ফোটা ফেলা হয়, তাহলে ইমাম আবু হানীফা এবং ইমাম আবু ইউসুফ রহ. এর নিকট রোযা ভাঙ্গবে না।

তবে নারীদের জরায়ুতে কোন কিছুর ফোটা ফেললে বিনা মতানৈক্যে রোযা ভেঙ্গে যাবে।

এটিই সহীহ।

সূত্রঃ(ফাতওয়ায়ে আলমগীরীঃ ১/১০৪, জাদীদ ফিকহী মাসায়িলঃ ৯৭পৃ.)

#জরায়ুতে আঙ্গুল প্রবেশ করানো:

নারীর জরায়ুতে কোন ঔষধ কিংবা পানি বা তেল

দ্বারা ভিজা আঙ্গুল প্রবেশ করালে রোযা ভেঙ্গে যাবে।

এমনিভাবে নারীর জরায়ুতে শুকনো আঙ্গুল

প্রবেশ করিয়ে পুরোটা বা কিছুটা বের

করে আবার দ্বিতীয়বার প্রবেশ করালেও রোযা ভেঙ্গে যাবে।

এর দ্বারা কাযা ওয়াজিব হবে কাফফারা নয়। 

আর যদি শুকনো আঙ্গুল একবার প্রবেশ করিয়ে পুরোটা বের করে নেয়, দ্বিতীয়বার প্রবেশ না করায়, তাহলে রোযা ভাঙ্গবে না।

সূত্রঃ(দুররে মুখতারঃ ১/১৪৯)

#স্ত্রীর জরায়ুতে স্বামীর আঙ্গুল প্রবেশ করানো:

স্ত্রীর জরায়ুতে স্বামী যদি আঙ্গুল প্রবেশ করায়, তাহলে স্বামীর রোযা ভাঙ্গবে না।

আর স্ত্রীর ব্যাপারে কথা হল,যদি কোন ঔষধ কিংবা পানি বা তেল দ্বারা ভিজা আঙ্গুল প্রবেশ করায়,

তাহলে রোযা ভেঙ্গে যাবে।

এমনিভাবে শুকনো আঙ্গুল প্রবেশ করিয়ে পুরোটা বা কিছুটা বের করে আবার দ্বিতীয়বার প্রবেশ করালেও রোযা ভেঙ্গে যাবে।

এর দ্বারা কাযা ওয়াজিব হবে কাফফারা নয়।

আর যদি শুকনো আঙ্গুল একবার প্রবেশ করিয়ে পুরোটা বের করে নেয়,দ্বিতীয়বার প্রবেশ না করায়,

তাহলে রোযা ভাঙ্গবে না।

সূত্রঃ(আহসানুল ফাতওয়াঃ ৪/৪৪৭)

#রোযা ভেঙ্গে গিয়েছে মনে করে সহবাস করা:

স্বামী স্ত্রীর জরায়ুতে ঔষধ দেয়ার জন্য আঙ্গুল দিয়েছে,ফলে তার কামভাব প্রবল হয়ে গিয়েছে।

এমতাবস্থায় সে মনে করল রোযা ভেঙ্গে গিয়েছে,

একথা মনে করে সহবাস করেছে।

তাহলে রোযার কাযা ও কাফফারা উভয়টি ওয়াজিব হবে।

সূত্রঃ(ফাতওয়ায়ে শামীঃ ২/১১৮, আহসানুল ফাতওয়াঃ ৪/৪৪৪)

#গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারি নারী:

গর্ভবতী নারী বা স্তন্যদানকারিনী যদি নিজের বা সন্তানের ক্ষতির আশঙ্কা মনে করে,তাহলে রোযা ভাঙ্গতে পারবে।

পরবর্তীতে শুধু কাযা কারবে,কাফফারা নয়।

সূত্রঃ(ফাতওয়ায়ে হিন্দিয়াঃ ১/২০৭, বাহরুর রায়িকঃ ২/২৮৬, ফাতওয়ায়ে দারুল উলূমঃ ৬/৪৭৮)

#দুগ্ধ পান করানো:

দুগ্ধ পান করানো দ্বারা রোযা নষ্ট হয় না।

সূত্রঃ(ফাতওয়ায়ে দারুল উলূমঃ ৬/৪৭৮)

#প্রসব পরবর্তী দুর্বলতার কারণে ফিদয়া দেয়া:

প্রসব পরবর্তী দুর্বলতার কারণে রোযা না রেখে ফিদয়া দেয়া যথেষ্ট নয়।

যদি ফিদয়া দিয়ে দেয়,আর পরবর্তীতে পূর্ণ সুস্থ হয়ে যায়,তাহলে আবার কাযা করতে হবে।

সূত্রঃ(হিদায়াঃ ২/২০৪,ফাতওয়ায়ে দারুল উলূমঃ ৬/৪৭৮)

#ঋতুস্রাব নারীর জন্য পানাহার:

ঋতুস্রাবের কারণে যদি রোযা না রাখে কিংবা রোযা রেখেছে কিন্তু দিনের বেলায় ঋতুস্রাব শুরু হয়ে গিয়েছে; তার জন্য দিনের বেলায় পানাহার করা জায়েয।

তবে অপরের সামনে নয়,কিন্তু দিনের বেলায় যদি ঋতুস্রাব থেকে পবিত্র হয়ে যায়,তাহলে অবশিষ্ট দিন পানাহার হতে বিরত থাকা ওয়াজিব।

সূত্রঃ(আহসানুল ফাতওয়াঃ ৪/৪২৮)

#বাচ্চাকে চিবিয়ে খাওয়ানো:

নিজের মুখ দ্বারা কোন কিছু চিবিয়ে বাচ্চাকে খাওয়ানো মাকরূহ,তবে অনন্যোপায় হলে মাকরূহ নয়।

সূত্রঃ(ফাতওয়ায়ে আলমগীরীঃ ২/১১)

#চিবাতে গিয়ে গিলে ফেলা:

কেউ অপরের জন্য খাবার চিবাতে গিয়ে নিজে যদি গিলে ফেলে,তাহলে রোযা ভেঙ্গে যাবে।

এর দ্বারা শুধু কাযা আসবে,কাফফারা নয়।

সূত্রঃ(ফাতওয়ায়ে আলমগীরীঃ ২/১১)

#তরকারীর লবন দেখা:

জিহ্বা দ্বারা কোন কিছুর স্বাদ নিয়ে থুথু ফেলে দিলে রোযা ভাঙ্গবে না,তবে বিনা প্রয়োজনে এমন করা মাকরূহ।

হ্যাঁ,কারো স্বামী যদি বদ মেজাজ হয়,তাহলে স্ত্রীর জন্য তরকারীর লবনের স্বাদ দেখা জায়েয, মাকরূহ নয়।

সূত্রঃ(শরহে বেকায়াঃ ১/৩১৩)

#খাদ্য পাকানোর কারণে তৃষ্ণার্ত হওয়া:

কেউ যদি খাদ্য পাকানোর কারণে এত তৃষ্ণার্ত হয়েছে যে,প্রাণ চলে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে,তাহলে তার জন্য এই মুহূর্তে রোযা ভাঙ্গা জায়েয,কিন্তু ইচ্ছাকৃতভাবে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করলে গুনাহগার হবে।

সূত্রঃ(ফাতওয়ায়ে শামীঃ ২/১৫৯)

#লিপজেল বা লিপষ্টিক ব্যবহার করা:

নারীদের জন্য রোযাবস্থায় লিপজেল বা লিপষ্টিক ব্যবহার করা জায়েয, তবে সতর্ক থাকতে হবে যেন মুখে চলে না যায়।

কেননা,মুখে চলে গেলে রোযা মাকরূহ হয়ে যাবে।

আর এর স্বাদে যদি গলায় অনুভব হয়,তাহলে রোযা ভেঙ্গে যাবে।

সূত্রঃ(জাদীদ ফিকহী মাসায়িলঃ ১/১৮৮,আহসানুল ফাতওয়াঃ ৪/৪২৪)

#স্ত্রীর জন্য নফল রোযা রাখা:

স্বামীর অনুমতি ছাড়া স্ত্রীর জন্য নফল রোযা রাখা মাকরূহ।

কিন্তু স্বামী যদি অসুস্থ হয়,কিংবা নিজেই রোযাদার হয়,বা হজ্জ-উমরার ইহরামে থাকে,তাহলে স্ত্রীর জন্য নফল রোযা রাখা মাকরূহ নয়।

স্ত্রী যদি স্বামীর অনুমতি ছাড়া নফল রোযা রাখে, তাহলে স্বামীর জন্য স্ত্রীর রোযা ভাঙ্গানো জায়েয।

সূত্রঃ(আলমগীরীঃ ২/১৪)

#স্ত্রীর পক্ষ হতে স্বামী কাযা রোযা রাখা:

কোন নারীর যদি রমযান মাসের রোযা কাযা হয়ে যায়,এক্ষেত্রে তার স্বামী যদি তার পক্ষ হতে কাযা রোযা রাখে,তাহলে আদায় হবে না,বরং স্ত্রীকেই রাখতে হবে।

সূত্রঃ (ফাতওয়ায়ে দারুল উলূমঃ ৬/৪২২)

#ঔষধ সেবন করে ঋতুস্রাব বন্ধ রাখা:

নারীদের ঋতুস্রাব এটি স্বভাবগত বিষয়। 

একে কৃত্রিম উপায়ে বন্ধ রাখা মোটেই সমিচীন নয়।

বরং সাস্থের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।

এতদসত্ত্বেও কেউ যদি কৃত্রিম উপায়ে ঋতুস্রাব বন্ধ রেখে রোযা পালন করে,তাহলে রোযা আদায় হয়ে যাবে,তবে ঋতুস্রাব শুরু হয়ে গেলে কেউ যদি ঔষধ সেবন করে বন্ধ করে দেয়,তাহলে রোযা আদায় হবে না।

সূত্রঃ(দুররে মুখতারঃ ২/১১৫,খুলাসাতুল ফাতওয়াঃ ১/২৩১,কিতাবুল হায়য, জাওহারাতুন

নাইয়ারাহঃ ১/১৪৮)

বিঃদ্রঃ ভূল ত্রুটি মার্জনীয়,মাসঅালার ব্যাপারে লজ্জা না করাই শরীয়তের বিধান।